চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য
চট্টগ্রামের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা থাকলেও সেরকম কোন নিদর্শন খুজে পাওয়া যায়নি। প্রস্তরযুগের কিছু অস্ত্রের চিহ্ন পাওয়া গেছে সীতাকুন্ডের পাহাড়ি এলাকায়। চট্টগ্রামের দ্বীপ সন্দ্বীপ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ইতিহাসবেত্তা ড. নলিনীকান্ত ভট্টাচার্য।
আরব পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর কে সমবন্দর নামে জানতো পালবংশের শাসনামলে। চট্টগ্রাম পালবংশের শাসনামলে ধর্মপালের অধীনে ছিলো।
চট্টগ্রামের পূর্ব নাম কি?
মোগলদের আমলে ১৬৬৬ খ্রীষ্টাব্দে আরকানদের মোগলরা হঠিয়ে চট্টগ্রামের নাম রাখেন "ইসলামাবাদ"।মীর কাশেমের আমলে ব্রিটিশরা ১৭৬০ সনে নাম রাখেন চিটাগাং। ইসলামাবাূ নাম রেখেছিলেন মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খান (১৬৬৬ সনে)। ইসলামাবাদের নাম বদলে চাটিগাঁও নাম রাখা হয়। বাংলাদেশ সরকারের আওতায় বাংলা চাটিগাঁওয়ের সংস্কৃত উচ্চারণ চট্টগ্রাম (২০১৮ সালের এপ্রিল।
দ্বিতীয় সহস্রাব্দে, দশম এবং একাদশ শতক)
চট্টগ্রাম এর
শাসক ছিলেন
দক্ষিণ পূর্ববঙ্গ
এবং আরাকান
চন্দ্ররাজরা ।চন্দ্রবংশীয়
রাজা সু-লা-তাইং-সন্দয়া
তার শিললিপিতে
লিখা হয়
চেৎ-ত-গৌঙ্গ যার অর্থ
হলো 'যুদ্ধ
করা অনুচিৎ।
আরেকানি পুঁথিতে
উল্লেখ করা
হয় এই
এলাকার নাম
চেত্তগৌং। কালক্রমে
চেত্তগৌং থেকে
এসেছে চাটিগ্রাম
থেকে চাটগাঁ
এবং
চট্টগ্রাম এভাবেই
চিটাগাং নামের
উৎপত্তি হয়
।
চট্টগ্রাম এর
ইতিহাস নিয়ে
অনেক বিতর্ক
রয়েছে।ইতিহাস থেকে
জানা যায়
ঐ সময়ে
চট্টগ্রাম এর
প্রধান ধর্ম
ছিলো বৌদ্ধ
ধর্ম। তিব্বতীয়
দের পুঁথি
অনুযায়ী চট্টগ্রাম
এ একটি
পন্ডিত বিহার
ছিলো।
মুসলিম শাসনামালে,
পালবংশ এবং
চন্দ্রবশের পর
কয়েকজন শাসক
এর কথা
জানা যায়
। ১৩৩৮
সালে ঐতিহাসিক
শিহাবুদ্দিন তালিশের
মতে জানা
যায় ফখরুদ্দিন
মোবারক শাহ
এর চট্টগ্রাম
বিজয় এর
আগ পর্যন্ত
ইতিহাস স্পষ্ট
ছিলো না।
চট্টগ্রাম স্বাধীন
সোনারগাও রাজ্যের
অন্তর্ভুক্ত হয়।
ইবনে বতুতার সময়ে চট্টগ্রাম (১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দ)
এই সময়ে চট্রগ্রামে এ আসেন বিখ্যাত মুর পরিব্রাজক ইবনে বতুতার তিনি
বলেছেন " বাংলাদেশের শহরে আমরা প্রবেশ
করলাম তা
হল সোদকাওয়াঙ
(চট্টগ্রাম)"।১৩৫২-৫৩ সালে
ফকরুদ্দীন মোবারক
শাহ এর
পুত্র ইখতিয়ার
উদ্দিন গাজী
শাহকে হত্যা
করে বাংলার
প্রথম স্বাধীন
সুলতান ইলিয়াস
শাহ বাংলার
মসনদ দখল
করলে চট্টগ্রামও
তার দখলে
নিয়েছিলেন ।
তার সময়ে
চট্টগ্রামকে প্রধান
বন্দর হিসাবে
প্রতিষ্ঠিত করেন।
নবাব সিরাজদ্দৌলার
পরাজয় চট্টগ্রামে
ইংরেজদের প্রভাব
প্রতিপত্তি অনেক
বেড়ে যায়
১৭৫৭ সালে
পলাশীর সময়ে।।
ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির শাসনামলে
চট্রগ্রামের দেওয়ান ও চিফ
সময়কাল |
চিফ |
দেওয়ান |
১৭৬১-৬৪ |
হ্যারি ভেরেলস্ট |
গোকুলচাঁদ ঘোষাল |
১৭৬৫ |
টমাস প্লেডেন |
রামশঙ্কর হাওলাদার |
১৭৬৬-৬৮ |
ফ্রান্সিস চার্লটন |
রমাকান্ত বোস(৬৬-৬৭) |
১৭৬৮-৬৯ |
জন রিড |
নন্দ দুলাল |
১৭৬৯-৭০ |
টমাস লেইন |
নন্দ দুলাল |
১৭৭০-৭২ |
ওয়ালটার উইলকিনস |
আথারাম হাওলাদার |
১৭৭২-৭৩ |
চালর্স বেন্টলি |
|
১৭৭৩-৭৪ |
জন রিড
(দ্বিতীয় দফা) |
বৈঞ্চচরণ বোস |
১৭৭৪(জানু-জুন) |
হেনরি ওয়াল্টার |
লালারাম রায়
ও |
১৭৭৪(জুন-নভে) |
হেনরি গুডউইর |
মদন মোহন
হালদার |
১৭৭৪-৭৫ |
উইলিয়াম কোটস |
|
১৭৭৫-৭৬ |
নাথানিয়েল বেইটম্যান |
|
১৭৭৬-৭৮ |
ফ্রান্সিস ল |
|
১৭৭৮-৮১ |
রিচার্ড সামনার |
|
১৭৮১-৮২ |
জন বুলার |
|
১৭৮২-৮৫ |
জেসম ইরউইন |
কিঞ্জলকিশোর চক্রবর্তী |
১৭৮৫(আগস্ট-সেপ্টে |
জন বুলার
(দ্বিতীয় দফা) |
কালীচরণ রায়
(৮৫-৯০) |
১৭৮৫-৮৬ |
চার্লস ক্রফটেস |
|
১৭৮৬(সেপ্টে-অক্টো) |
জর্জ ডডেসওয়েল |
|
১৭৮৬-৯৩ |
শিয়ারম্যান বার্ড |
গৌরিশঙ্কর রায়
(৯০-৯৫) |
পার্বত্য
চট্টগ্রামের ইতিহাস
কর্মক্ষেত্র |
নারী-পুরুষের
যৌথ কর্মকাণ্ড |
শুধুমাত্র
পুরুষের কর্ম |
শুধুমাত্র
নারীর কর্ম |
শিশুদের
কর্ম |
জুমচাষ |
জঙ্গল
পরিষ্কারকরণ, ছাই
ছিটানো, শস্য
বপন ও
নিড়ানো, শস্য
কর্তন ও
মাড়াই। |
জঙ্গল
ও গাছের
ডালপালা কাটা,
অগ্নিসংযোগ, শিকার,
শস্য বিক্রয়। |
মৎস্য
শুকানো, মজুত
রাখা, ঢেঁকিতে
ধান ছাঁটা। |
পশুপাখি
তাড়ানো। |
সমতল
ভূমির কৃষি |
বীজ
বপন ও
চারা রোপণ,
শস্য নিড়ানো
ও পরিচর্যা,
শস্য উত্তোলন। |
লাঙ্গল
দেওয়া, মই
দেওয়া, শস্য
বিক্রয়, সেচ
ও কীটনাশক
ব্যবহার। |
শস্য
শুকানো ও
সঞ্চয় রাখা,
ঢেঁকিতে ধান
ছাঁটা। |
পশুপখি
তাড়ানো ও
শস্য পাহারা
দেওয়া। |
গৃহসংলগ্ন
বাগান ও
সবজি তে |
জমি
তৈরি, বীজ
বপন ও
ফসল উত্তোলন। |
ফল
সংগ্রহ ও
বড় গাছের
চারা রোপণ
করা। |
আহরিত
ফল ও
সবজি সংরণ
করা। |
বাগান
পাহারা দেওয়া
ও আগাছা
নিড়ানো। |
গৃহস্থালি
কর্ম |
--- |
--- |
রান্না,
পশুপাখির পরিচর্যা,
পরিচ্ছন্নতা, পানি
আনা, শিশু
পালন করা। |
গৃহস্থালি
কর্মে সহযোগিতা,
পশুচারণ। |
বনজ
সম্পদ সংগ্রহ |
ছন
ও ঘাস
কাটা এবং
ফলমূল সংগ্রহ
করা। |
বাঁশ,
বেত ও
কাষ্ঠ আহরণ। |
জ্বালানি
কাঠ ও
শামুক সংগ্রহ। |
বনজ
ফলমূল ও
সবজি সংগ্রহ
এবং শামুক
ওকাকড়াজাতীয় প্রাণী
সংগ্রহ। |
শিকার |
মৎস্য
শিকার। |
বন্য
হরিণ শিকার,
শূকর, খরগোশ
ও পাখি
শিকার। |
--- |
মৎস্য
শিকার। |
হস্তশিল্প
ও অন্যান্য |
বাঁশ
ও বেতের
ঝুড়ি, মাদুর
ইত্যাদি তৈরি;
বাঁশ ও
বেতের ছাল
দ্বারা রশি
তৈরি এবং
লোকজ ঔষধ
তৈরি। |
বেতের
রশি তৈরি
করা, চোলাই
মদ তৈরি,
গৃহ নির্মাণ। |
তাঁত
বোনা, সুতা
কাটা, বিড়ি
সিগারেট তৈরি। |
বিভিন্ন
হস্তশিল্পে সহকারী
হিসেবে কাজ
করা। |
পশু
পালন |
--- |
--- |
হাঁস-মুরগি
পালন। গরু/ছাগল
পালন, শূকর
পালন, দুগ্ধ
দোহন, ঘি,মাখন
ও দধি
তৈরি। |
পশু
চরানো। |
ব্যবসা-বাণিজ্য
ও অন্যান্য |
হাটে-বাজারে
পণ্য বিক্রয়। |
বিক্রয়কর্মে
সহযোগিতা করা। |
--- |
চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বণ্টন ও শতকরা হার
জনগোষ্ঠীর
নাম |
মোট
জনসংখ্যা (পূর্ণ
সংখ্যায়) |
শতকরা
হার |
বাঙালি |
৫,০০,০০০ |
৫০% |
চাকমা |
২,৪০,০০০ |
২৪% |
মারমা |
১,৪৩,০০০ |
১৪% |
ত্রিপুরা |
৬১,০০০ |
৬% |
মুরং |
২২,০০০ |
২.২% |
তঞ্চংগ্যা |
১৯,০০০ |
১.৯% |
বম |
৭,০০০ |
০.৭% |
পাঙেখা |
৪,৫০০ |
০.৩৫% |
চাক |
২,০০০ |
০.২০% |
খ্যাং |
২,০০০ |
০.২০% |
খুমি |
১,২০০ |
০.১২% |
লুসাই |
৬৬২ |
--- |
কুকি
(ম্রো) |
৫,০০০ |
(?) |
চট্টগ্রামের সংস্কৃতি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
ও অপরুপ
লীলাময় একটি
সুন্দর ও
সংস্কৃতি রয়েছে
সমুদ্র কেন্দ্রিক
হওয়ার জন্য
অনেক সুগঠিত
চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামের বিখ্যাত ব্যক্তির নাম কি?
স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
- মাস্টারদা সূর্য সেন
- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
- কল্পনা দত্ত
(যোশী)
- পূর্ণেন্দু দস্তিদার
- যাত্রামোহন সেন
- বিনোদ বিহারী চৌধুরী
- জহুর আহমদ চৌধুরী
- এম এ আজিজ
- এম এ হান্নান
- মনিরুজ্জমান ইসলামাবাদী
- সিপাহী বিদ্রোহের নায়ক সুবেদার রজব আলী
- কাজেম আলী মাস্টার
- শরৎ দাশ
- মহিমচন্দ্র দাশ
- কমরেড মোজাফ্ফর আহমদ
- যতীন্দ্রমোহন সেন
- শহীদ নির্মল সেন
- অম্বিকা চক্রবর্তী
- লোকনাথ বল
- অনন্ত সিং
- গণেশ ঘোষ
- তারকেশ্বর দস্তিদার
- নেলী সেনগুপ্তা
- আবদুল হক দোভাষ
- রফিউদ্দিন সিদ্দিকী
- ব্রজেন সেন
- শরৎ কানুনগো
- দীনেশ দাশগুপ্ত
- কালিপদ চক্রবর্তী
- অধ্যাপক পুলিন দে
- অমর সেন
- কমরেড আবদুচ সত্তার
- অনঙ্গ সেন
- বজলুস সত্তার
- শুধাংশু বিমল দত্ত
- আরতি দত্ত
- অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন
- কমরেড দেবেন সিকদার
- অধ্যাপক ননীগোপাল দত্ত
- শরদিন্দু দস্তিদার
- পূর্নেন্দু কানুনগো
- এ কে খান
- চৌধুরী হারুনুর রশিদ
- শেখ মোজাফ্ফর আহমদ
- ক্যাপ্টেন আবুল কাসেম
- সিরাজুল হক মিয়া
- অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ
- মোহাম্মদ আবদুল ওহাব
- ফজলুল হক বি,এস,সি
- আবদুল্লা আল হারুন
- আতাউর রহমান খান কায়সার
- এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী
- আহমেদুর রহমান আজমী
- আহসানউল্লাহ চৌধুরী
- আবুল বশার
- এম এস হক
- এডভোকেট চিত্ত দাশগুপ্ত
- এটি এম নিজামুদ্দিন
- লুৎফুল হক মজুমদার
- শহীদ স্বপন চৌধুরী
ব্রিটিশ শাসনামল থেকে চট্টগ্রামে শিক্ষা বিস্তারে যাঁরা বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন
- মীর হামজা
- মীর এয়াহিয়া
- এবাদ উল্লা পন্ডিত
- বঙ্কিম চন্দ্র সেন
- ডাক্তর অন্নদা চরণ খাস্তগীর
- ডাক্তার চন্দ্রকান্ত খাস্তগীর
- ড. বেনী মাধব বড়ুয়া
- প্রিয়দা রঞ্জন
- সুবিমল দত্ত
- বিনোদ দত্ত
- রেবতী রমন দত্ত
- ড.এনামুল হক
- নেপাল দস্তিদার
- এ আর মল্লিক
- সৈয়দ আলী আহসান
- আয়ুব খাঁ
- চন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
- বিভুতি ভট্টাচার্য
- যোগেশ চন্দ্র সিংহ
- ভাষা সৈনিক প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম
- ভাষা সৈনিক মাহফুজুল হক
- প্রিন্সিপ্যাল রেজাউল করিম
- মোজাফ্ফর আহমদ
- সাহিত্যিক মোবাশ্বের আলী
- শরদিন্দু দত্ত
- আর আই চৌধুরী
- মোহাম্মদ শাহ কোরাইশী
- রশিদ আল ফারুকী
- সেকান্দর খান
- হায়াত মাহমুদ
- জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম
- প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস
- রনজিৎ চক্রবর্তী
- প্রফেসর আনিসুজ্জমান
- ড. অনুপম সেন
- ড. জামাল নজরুল ইসলাম
- মমতাজ উদ্দিন আহমদ
- হৃদয় সেন
- প্রফেসর মোহাম্মদ আলী
- আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দিন
- অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খাঁন
- প্রণতি সেন
- ড. আবু ইউছুফ আলম
- আবুল হায়াত চৌধুরী
- এ কে এম এমদাদুল ইসলাম
- সফিউল আলম।
ধন্যবাদ সাথেই থাকুন FlowzByte এর
লেখক: শিক্ষার্থী, ইকোনমিক্স, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বাংলাদেশ।